Monday, 9 April 2012

ঢেউয়ের সঙ্গে - গন্ধবণিক

ঢেউয়ের সঙ্গে

গন্ধবণিক

অরূপ ভোরের বুকে কুয়াশারা থমকে দাঁড়ালো
নিদ্রাহারা যে প্রহর ছিল তা-ই করি সমর্পণ,
মূর্তিমতী, এই নাও দীপখানি; শুষে নিও আলো-
পোকা থিকথিক করে, জনারণ্যে করোনা চয়ন।

হাজার দরোজা খুলে বের হয় সাজানো পুতুল
কূটযন্ত্রে আবদ্ধ পশুরা নিষ্ঠুর হেঁয়ালি করে-  
রূপকথা চোখে এঁকে রাজপুত্র করে বড় ভুল,
অদেখার দেখা পেয়ে নিখিলের প্রাণ ওঠে নড়ে।

আকাশ দেখেছো নাকি-  ভালো করে গতরে মেখেছো ?
যদিও মণ্ডূকবৃত্তি তবু ঢেউয়ের সঙ্গে যোঝে
লজ্জাহীন বাসনারা। সময়ের দাঁত কী দেখেছো ?
পৃথিবীও ভীত হয়ে রাত্রিশেষে সূর্যালোক খোঁজে।

ফিরে যাও হে যুবতী, এইখানে অবুঝ কেতন
দুর্লভ ঝড়ের মুখে। ফিরে যাও, যাও, ফিরে যাও-
পাখির মুখোশ পরে হেঁটে যায় দণ্ডিত যে-জন
নয়নাভিরাম, কচি কেন তাকে বুকটা দেখাও ?

প্রশ্নচিহ্নের মতন দাঁড়িয়ে রয়েছে চেনা ছায়া;
দুইটি ঠোঁটের সাথে কথা বলে ভিন্ন দু’টি ঠোঁট,
দুইটি চোখের থেকে ঝরে ভিন্ন চোখদের-ই মায়া,
স্রোতস্বিনী অহোরাত্র দরোজায় করে ছটফট। 

Tuesday, 3 April 2012

আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও - শহীদ কাদরী

আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও

হে নবীনা, এই মধ্য-ম্যানহাটানে বাতাসের ঝাপটায়
তোমার হঠাৎ খুলে যাওয়া উদ্দাম চুল
আমার বুকের ’পর আছড়ে পড়লো
চিরকালের বাংলার বৈশাখের ঝঞ্ঝার মতন।

তোমার জবার মতো চোখে রাঙা শ্রাবণের জল
পালতোলা নৌকার মতন বাঁকাচোরা ঢেউয়ে ঢেউয়ে কম্পমান
তোমার বিপদগ্রস্ত স্তন।
আমি ভাবতে পারি নি কোনোদিন এতো অসাধারণ আগুন
প্রলয় এবং ধ্বংস রয়েছে তোমার চুম্বনগুলিতে!

হে নবীনা,
আমার তামাটে তিক্ত ওষ্ঠের ও অবয়বের জন্যে
যেসব চুম্বন জমে উঠবে সংগোপনে,
তাদের ওপর থেকে আমার স্বত্বাধিকার আমি ফিরিয়ে নিলাম
আমাকে শীতের হাওয়ার হাতে ছেড়ে দাও,
স্বনির্বাচিত এই নির্বাসনে
নেকড়ের দঙ্গলের মতো আমাকে ছিঁড়ে খাক বরফে জ্বলতে থাকা ঋতু
শুধু তুমি,
আমার সংরক্ত চুম্বনের অন্তর্লীন আগুনগুলোকে
পৌছে দাও শ্রাবণে আষাঢ়ে রোরুদ্যমান
বিব্রত বাংলায়,
বজ্রে বজ্রে, বেজে উঠুক নতজানু স্বদেশ আমার। 

দাবা খেলায় বীজগণিত পদ্ধতিতে (ALGEBRIC SYSTEM) এ লেখার নিয়ম PART- 1

দাবা সম্পর্কে আমার জ্ঞানের সীমা সামান্য, তবু দাবার বিভিন্ন বই পড়ে এবং আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের সাথে কিছু শেয়ার করার প্রয়াস করছি।
আমরা অনেকে দাবা খেলি কিন্তু আমরা দাবা খেলায় লেখার নিয়ম জানিনা ফলে অনেক সময় খেলা নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে সমস্যা হয়।যদি আমরা লিখতে জানতাম তাহলে প্রতিটা চাল স্কোর শীট এ রেকর্ড থাকত ফলে কোনো সমস্যা হতো না। তাহলে এবার জেনে নিন দাবার চাল রেকর্ড করার নিয়ম।
দাবা বোর্ডের মধ্যে মোট ৬৪ টি সাদা-কালো ছক বা ঘর আছে।প্রথমেই দেখুন দাবা বোর্ডের লম্বালম্বি ৮টি ‘ফাইল’ কে, a , b , c , d , e , f , g , h   এইভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে । আর সমান্তরাল ‘সারি’ গুলোকে 1 ,  2 , 3 , 4 , 5 ,  6 , 7 , এইভাবে নাম্বার দেয়া আছে।


 এখানে দাবা বোর্ডের পুরো 64টি ঘরের সাংকেতিক নাম্বার বীজগণিত পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ করে দেখানো হয়েছে :

এইতো গেল ছকের সূচক চিহ্ন এবার বিভিন্ন ঘুঁটির সাংকেতিক চিহ্ন বা আদ্যক্ষর কিভাবে লেখা হয় তা দেয়া হল।
রাজা =KING=K
মন্ত্রী =QUEEN=Q
গজ =BISHOP=B
নৌকা =ROOK=R
ঘোড়া =KNIGHT=N
বড়ে =PAWN=বীজগণিত পদ্ধতিতে এর কোনও সাংকেতিক চিহ্ন দেয়া হয় না।

চাল : এবার 3 নম্বর  ছবিটি লক্ষ করি। যখন

 কোন একটি ঘুঁটি চাল দেয়া হবে, তখন তার আদ্যক্ষর এবং যে ঘরে ঘুঁটিটি পৌছাল, সেই ঘরের নাম্বার লিখতে হবে।যেমন
 ঘোড়া বা নাইটের আদ্যক্ষর হলো, N এবং যে ঘরে পৌছাল তার নাম্বার হলো c2 , অতএব লিখতে হবে Nc2 । 

এখানে সাদা ঘুঁটির চাল দেয়া হল :
(1)  Nc2 অর্থাৎ সাদা ঘোড়া c2 ঘরে চাল দেয়া হয়েছে

(2) Ra1 অর্থাৎ সাদা নৌকা a1 ঘরে চাল দেয়া হয়েছে

(3) Re1 অর্থাৎ সাদা নৌকা e1 ঘরে চাল দেয়া হয়েছে

(4) Qa8 অর্থাৎ সাদা মন্ত্রী a8 ঘরে চাল দেয়া হয়েছে
(5) c4 অর্থাৎ সাদা বড়ে c4 ঘরে চাল দেয়া হয়েছে

এখানে কালো ঘুঁটির চাল দেয়া হল :
(1) Nc8 অর্থাৎ ঘোড়া c8 চাল দেয়া হয়েছে

(2) Rh3 অর্থাৎ নৌকা h3 চাল দেয়া হয়েছে

(3) Bf7 অর্থাৎ হাতি f7 ঘরে চাল দেয়া হয়েছে

(4) আমরা এবার নিচের ছবিটিতে 2টি নৌকাকে
লক্ষ করি দেখা যাবে তার একই সারিতে আছে।
2টি নৌকা তো একই ঘরে চাল যায় যেমন   d4   ।
তাহলে এভাবে লিখবেন ধরুন a1  ঘরের নৌকা d1   ঘরে আনেন তাহলে লিখবেন  Rad1      অর্থাৎ যে ঘর থেকে পিস টি আনছেন এবং যে ঘরে নিচ্ছেন সেই ঘরের নাম ও পরে ঘরের সংখ্যাটি লিখবেন।

পরবর্তী লেখা অর্থাৎ পার্ট 2 দেখুন আরো জানতে চাইলে ।

সোনার বোতাম - গন্ধবণিক

সোনার বোতাম

গন্ধবণিক

এমন খেলায় শুধু পাগলামি শুধু এলেবেলে বাক্যের বুক
কেউ কাছে নেই, কিছু বলবার
                                              কিছু খুঁজবার ভ্রম বেড়ে যায়
                কলজের জোর
                ভীষণ নরম
দিনের বেলায় দুইটি টগর উপহার এলো, ছোট্ট মেয়েটি
                 এখনো কেন যে
                 কিশোরী হয়নি ! ভালোই লাগে না....
মুখোশ পড়েই ফুঁপিয়ে কাঁদল নিজের আয়না
মহাজীবনের ঘুম এসে গেল হঠাৎ হঠাৎ -

মধ্যেরাত্রে বিছানাটা তাই খেলার সঙ্গী, বুঝবে না কেউ
জগতের কাছে ক্ষুদ্র বিন্দু ধার চেয়েছিল মরমি সকাল
               তারপর শোক,
               অত্যাগসহন-
নিজেই নিজের ঠিকানা খুঁজছি, এতটা কঠিন ?
                সহায়তা নেই -
গাছগুলোসব বোকার মতন দাঁড়িয়েই থাকে
                                                          হাঁটতে শেখেনি;

হারানো কথার ঘ্রাণে বয়ে আনে ২৩টি বাতাস
                                                          প্রতিটি অঙ্গে,
ভুরু কোঁচকানো ফর্সা পাখিরা সোনার বোতাম
                                                          ঠোঁটে নিয়ে ঘোরে
              দেবে না কখনো,
              দেবে কি কখনো ?
ভয় পেয়ে যাই, ভয় পেয়ে হায় চকিত সাহসে
              হাজার আকাশ
              চিবিয়ে খেলাম
চোরকে ডেকেছি---চুরি করে নাও, লাল-নীল-কালো প্রবল হিংসা ।

তুমি বলেছিলে - শামসুর রাহমান

তুমি বলেছিলে

দাউদাউ পুড়ে যাচ্ছে ঐ নয়াবাজার।
পুড়ছে দোকানপাট, কাঠ,
লোহালক্কড়ের স্তূপ, মসজিদ এবং মন্দির।
দাউদাউ পুড়ে যাচ্ছে ঐ নয়াবাজার।

বিষম পুড়ছে চতুর্দিকে ঘর-বাড়ি।
পুড়ছে টিয়ের খাঁচা, রবীন্দ্র রচনাবলী, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার,
মানচিত্র, পুরনো দলিল।
মৌচাকে আগুন দিলে যেমন সশব্দে
সাধের আশ্রয়ত্যাগী হয়
মৌমাছির ঝাঁক,
তেমনি সবাই
পালাচ্ছে শহর ছেড়ে দিগ্বিদিক। নবজাতককে
বুকে নিয়ে উদ্ভ্রান্ত জননী
বনপোড়া হরিণীর মতো যাচ্ছে ছুটে।

অদূরে গুলির শব্দ, রাস্তা চষে জঙ্গি জিপ। আর্ত
শব্দ সবখানে। আমাদের দু’জনের
মুখে আগুনের খরতাপ। আলিঙ্গনে থরোথরো
তুমি বলেছিলে,
‘আমাকে বাঁচাও এই বর্বর আগুন থেকে, আমাকে বাঁচাও’  
আমাকে লুকিয়ে ফ্যালো চোখের পাতায়
বুকের অতল কিংবা একান্ত পাঁজরে,
শুষে নাও নিমেষে আমাকে
চুম্বনে চুম্বনে।

দাউদাউ পুড়ে যাচ্ছে ঐ নয়াবাজার,
আমাদের চৌদিকে আগুন,
গুলির ইস্পাতি শিলাবৃষ্টি অবিরাম।
তুমি বলেছিলে
‘আমাকে বাঁচাও।’
অসহায় আমি তা-ও বলতে পারিনি।

অনির্ণীত নারী - হেলাল হাফিজ

অনির্ণীত নারী

নারী কি নদীর মতো
নারী কি পুতুল,
নারী কি নীড়ের নাম
টবে ভুল ফুল।

নারী কি বৃক্ষ কোনো
না কোমল শিলা,
নারী কি চৈত্রের চিতা
নিমীলিত লীলা।

কোমল কংক্রিট - হেলাল হাফিজ

কোমল কংক্রিট

জলের আগুনে পুড়ে হয়েছি কমল,
কী দিয়ে মুছবে বলো আগুনের জল। 

অশ্লীল সভ্যতা - হেলাল হাফিজ

অশ্লীল সভ্যতা

নিউট্রন বোমা বোঝ
মানুষ বোঝ না ! 

প্রিয়তমাসু - শহীদ কাদরী

প্রিয়তমাসু

ভেবেছি তোমার খোঁপার জন্যে
পাঠাবো একটি সোনালি তারা,
- সে কেবল কথা হাল্কা, নীল ও
                                  কুয়াশাময়।
বরং কিনেছি উজাড় পকেটে
সেন্টের শিশি, স্বপ্নমাখা !

রাত্রে তোমাকে স্বপ্নেও দেখি
গণিকালয়ের সারিতে একা,
আমারি মুখের মতন হাজার
মুখের মিছিল
           তোমার জন্যে প্রতীক্ষায়।

অলীক - শহীদ কাদরী

অলীক

একটি নর্তকীর নাচ তার অন্তিমে
পৌছানোর আগে, দশ লক্ষ কথার ঝনৎকারে
বোঝা যায় আমি আর একা নই
          এই সুন্দরতম শহরে।। 

Monday, 2 April 2012

নগ্ন - শহীদ কাদরী

নগ্ন

বারান্দার ত্রিভুজ কোণে
খোলা জানালার সারি সারি শিকের ফাঁক থেকে
দেয়ালের ঘুলঘুলির ফোকর দিয়ে
হতাশার একটি রন্ধ্র দিয়ে
সন্তের নিঃসঙ্গতায় দাঁড়িয়ে
নিষ্কাম ভাঁড়ের বিস্ময়ে
মরণের টানেল থেকে
ইচ্ছায় কি অনিচ্ছায়
দেখি স্নানরত
একটি নারী,
নগ্ন। 

বৈষ্ণব - শহীদ কাদরী

বৈষ্ণব

শাদা রাস্তা চ’লে গেছে বুকের মধ্যে
পাতার সবুজ সম্মিলিত কাঁচা শব্দে
যে তোমাকে ডেকেছিলো ‘রাধা’,
আধখানা তার ভাঙাগলা, আধখানা তার সাধা। 

একটা দিন - শহীদ কাদরী

একটা দিন

ডাঙায়-ডাঙায় অনেক ঘুরলে
মাছের সঙ্গে একটা দিন
না হয় কিছু জমলো ঋণ

হাওয়ায়-হাওয়ায় অনেক উড়লে
গাছের সঙ্গে একটা দিন
না হয় কিছু জমলো ঋণ

ঊরু আর নাভি অনেক খুঁড়লে
প্রেমের সঙ্গে একটা ‍দিন
না হয় কিছু জমলো ঋণ

সোনালি কাবিন - আল মাহমুদ

সোনালি কাবিন

সোনার দিনার নেই, দেনমোহর চেয়ো না হরিণী
যদি নাও, দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দু’টি,
আত্মবিক্রয়ের স্বর্ণ কোনোকালে সঞ্চয় করিনি
আহত বিক্ষত করে চারদিকে চতুর ভ্রুকুটি;
ভালোবাসা দাও যদি আমি দেব আমার চুম্বন,
ছলনা জানি না বলে আর কোন ব্যবসা শিখিনি;
দেহ দিলে দেহ পাবে, দেহের অধিক মূলধন
আমার তো নেই সখি, যেই পণ্যে অলঙ্কার কিনি।
বিবসন হও যদি দেখতে পাবে আমাকে সরল
পৌরুষ আবৃত করে জলপাইর পাতাও থাকবে না;
তুমি যদি খাও তবে আমাকেও দিও সেই ফল
জ্ঞানে ও অজ্ঞানে দোঁহে পরস্পর হবো চিরচেনা
পরাজিত নই নারী, পরাজিত হয় না কবিরা;
দারুণ আহত বটে আর্ত আজ শিরা-উপশিরা।